ইতিহাসের সাক্ষী দিনাজপুরের সীতাকোট বিহার

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৫ সময়ঃ ১:৫৭ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১:৫৭ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম

31456_1দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ নানা কারণেই বিখ্যাত। এখানে রয়েছে একটি বিহার। কাগুজে নাম সীতাকোট বিহার। তবে স্থানীয়রা বলে সীতার কোট।

এর গঠনপ্রণালি ও বিভিন্ন প্রাপ্ত বস্তু দেখে প্রত্নতাত্তি্বকরা মনে করেন, বিহারটি নির্মিত হয়েছিল সপ্তম থেকে অষ্টম শতাব্দীর মধ্যে।

এই বিহারকে কেন্দ্র করে নানা গল্প, কাহিনীও কম নয়। স্থানীয় অধিবাসীদের মতে, সীতাকে যখন বনবাসে দেওয়া হয়, তখন এ স্থানটিতেই আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি।

স্থানটির নিকটবর্তী আশুলিয়ার বিলের মাঝখানের এক উঁচু ঢিবিতেই বাস করতেন বাল্মীকি। সেখানে বসেই তিনি সাত কাণ্ডের রামায়ণ রচনা করেন। ধারণা স্থানীয়দের, সীতা বসবাস করতেন বলে এ স্থানের নামকরণ হয়েছে সীতার কোট বা সীতাকোট বিহার। জনশ্রুতি আছে, কোনো একসময় এখানে পাওয়া গিয়েছিল হীরার একটি কুড়াল। তবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের দেওয়া তথ্যে এর কোনো উল্লেখ নেই।

সিতাকোট বিহার আবিষ্কৃত হয় ১৯৬৮ সালে প্রথম খননের পর। এরপর ১৯৭২-৭৩ সালের দিকে আবারও খনন কাজ চলে। বর্গাকৃতির এ বিহারটির দৈর্ঘ্য ৬৫ মিটার এবং প্রস্থ ৬৫ মিটার। খননকালে বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষের সঙ্গে পাওয়া যায় বেশকিছু হস্তান্তরযোগ্য প্রত্নবস্তু। বিহারটির উত্তর বাহুতে রয়েছে ১.৮৩ মিটার প্রশস্ত প্রধান প্রবেশপথ। এ পথের অবস্থান আজও সুস্পষ্ট।

ভিক্ষুদের জন্য তৈরি ৪১টি কক্ষেরও চিহ্ন পাওয়া যায়। কক্ষগুলো সারিবদ্ধভাবে বর্গাকৃতির বিহারটিকে ঘিরে তৈরি করা হয়েছিল। একেকটি কক্ষ দৈর্ঘ্যে ৩.৫ মিটার এবং প্রস্থে ৩.৩৫ মিটার। এগুলোর পেছনেই রয়েছে ২.৪৪ মিটার প্রশস্তের টানা দেয়াল।

প্রতিটি কক্ষের প্রবেশপথও আলাদা। প্রতিটি কক্ষের দেয়ালে রয়েছে কুলঙ্গি। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা এতে রাখতেন নিবেদন মূর্তি, প্রদীপ, পুঁথিসহ নানা কিছু। বিহারের কেন্দ্রস্থলেও বারান্দা রয়েছে। এ বিহারের কেন্দ্রেই রয়েছে বিশাল আয়তনের আঙিনা। এটি দৈর্ঘ্যে ৪২.৩৮ মিটার এবং প্রস্থে ৪১.১৬ মিটার।

তবে এ বিহার শালবন বা পাহাড়পুর বিহার থেকে একটু পৃথক। কারণ, এতে কোনো কেন্দ্রীয় উপাসনালয় নেই। তবে পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম বাহুর কেন্দ্রে অবস্থিত ৩টি কক্ষ ভিক্ষুরা উপাসনালয় হিসেবে ব্যবহার করতেন। ভিক্ষুদের কক্ষ থেকে একটু দূরে দক্ষিণ-পূর্ব কোণের অদূরেই রয়েছে শৌচাগার।

বিহারটি খনন কাজ চালিয়ে প্রত্নতত্ত্ববিদরা মোট ৩টি নির্মাণ পর্যায় পর্যবেক্ষণ করেন। বিহার আজ পরিত্যক্ত। এখানে কোনো প্রত্নবস্তু নেই। যা আছে, তাও সংরক্ষণেরও কোনো উদ্যোগ নেই। ঐতিহাসিক স্থানটি দেখতে বছরের বিভিন্ন সময় অসংখ্য মানুষের আগমন ঘটে। এটি সংরক্ষণ করলে লোকসমাগম আরও বাড়ত।

 

প্রতিক্ষণ/এডি/আকিদুল

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G